Home STORY অনুভূতি (পর্ব _৪)
Home STORY অনুভূতি (পর্ব _৪)

অনুভূতি (পর্ব _৪)



#পর্ব-৪


কলেজ থেকে বাসায় ফিরে সোফায় ধপ করে বসে পরে মিহু।ক্লান্তিতে ঘুম আসছে তার।

এতক্ষন ইপসার ননস্টপ বকবকানি শুনে কানগুলো পর্যন্ত ব্যাথা হয়ে গেছে ।হিজাবটা খুলে সোফায়ই গা এলিয়ে দেয়।কিছুক্ষনের মধ্যে ঘুমিয়েও যায়।


ঘুম ভাঙে সাদিফের ডাকে।চোখগুলা ছোট ছোট করে বিরক্তিমাখা কন্ঠে বলে,


-কি সমস্যা তোমার?দেখছো না ঘুমাচ্ছি?ডাকো কেন?


-এই ভরদুপুরে তুই ঘুমাচ্ছিস?তাও বসার ঘরের সোফায়?বাড়িতে কি জায়গা কম হয়ে গেছে?যা নিজের রুমে যা।

মিহু একহাতে চোখ কচলায়।হাই তুলে বলে,

-ধ্যাত্।তুমি কি এখন সোফায় বসে বসে সার্কাস করবে হ্যাঁ?একটু ঘুমালে কি হয়?


"থাকনা ওকে ঘুমাতে দে"


পেছন থেকে কারো পুরুশালী কন্ঠে চমকে উঠে মিহু।ঘুম উড়ে যায় নিমিষেই।জলদি ঘাড় ঘুরিয়ে দেখতে নিলেই প্রচন্ড জোরে চিৎকার করে উঠে।ঘাড়ে হাত দিয়ে চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরে তার।অনেকক্ষন এককাত হয়ে শুয়ে ছিল তাই হঠাৎ করে ঘাড় ঘুরানোতে ঘাড়ের পেশিতে টান পরেছে তার।


সাদিফ দ্রুত ধরে মিহুকে।চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে অস্থির কন্ঠে বলে,


-কি হলো?


মিহুর চিৎকারে নাজিফা বেগম রান্নাঘর থেকে ছুটে এসেছে।

সেও চিন্তিত গলায় বললো,


-কি হলো?ঘাড়ে ব্যাথা করছে?


মিহু অস্পষ্ট সরে বলে,


-হু।


অভি এগিয়ে যায়।কিছুটা অপ্রস্তুতভাবে বলে,


-হঠাৎ নড়ে যাওয়ায় পেশিতে টান পরেছে।


সাদিফ তাকায়।বলে,


-তাহলে এখন?ঠি ক হবে কিভাবে? ডাক্তার ডাকবো?


-ম্যাসাজ করে দিলেই ব্যাথা কমে যাবে।তারপর কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে,আমি করবো?


সাদিফ দ্রুত উঠে দাড়ায়।অভিকে নিজের জায়গায় বসতে বলে।


-কর তাড়াতাড়ি কর।


অভি মিহুর পাশ ঘেঁষে বসে।নরম গলায় মিহুকে বলে,


-হাতটা সরাও।


মিহু ঘাড়ে রাখা হাত সরিয়ে নেয়।চোখমুখ খিঁচে বন্ধ করে আছে সে।অনেক জায়গায় দেখেছে কোথাও মচকে গেলে একটানে ঘুরিয়ে দেয় আর মচকানো জায়গা ঠি ক হয়ে যায়।এখন যদি এই লোকও ম্যাসেজের নাম করে ধুম করে তার ঘাড় ঘুরিয়ে দেয়?ভেবেই শিঁউরে উঠে সে।

তার ভাবনাকে সম্পূর্ণ ভুল প্রমান করে অভি এমন কিছুই করেনা।সে আলতো করে ঘাড়ে হাত দিয়ে বিভিন্ন কৌশলে ম্যাসেজ করতে থাকে।

মিহুর অসস্তি হয়।অভি তার অনেকটা কাছে বসে আছে।অভির ঠান্ডা হাতের ছোঁয়ায় ভিতরে ভিতরে বারবার কম্পিত হচ্ছে সে।


কিছু পোড়ার গন্ধ নাকে আসতেই দ্রুত রান্নাঘরে ছুট লাগায় নাজিফা বেগম।তরকারি না নামিয়ে গ্যাস জালিয়েই চলে এসেছিল সে।নিশ্চিত সব পুড়ে শেষ!!!


বেশ কিছুক্ষন ম্যাসেজ করার পরও মিহুর কোনো পরিবর্তন দেখতে পেলোনা সাদিফ।সে এখনো চোখমুখ খিঁচে বন্ধ করে রেখেছে।না পেরে অধৈর্য গলায় অভিকে বলে,


-অভি?ব্যাথা তো কমেনি মনে হয়।ওকে হসপিটালে নিয়ে যাই?


-আরে না রে।..মিহু ঘাড়টা ঘুরাওতো।


মিহু মৃদু কন্ঠে বলে,


-নাহ্,ব্যাথা করবে।


-করবেনা তুমি ঘুরিয়েতো দেখো।


মিহু চোখ খুলে।আড়চোখে একবার অভিকে দেখে।ধীরে ধীরে ঘাড়টা ঘুরায়।নাহ্,কোনো ব্যাথা নেই।সে অবাক হয়।উৎফুল্ল কন্ঠে বলে,


-ভাইয়া সত্যিই ব্যাথা নেই।আবার আগের মতো হয়ে গেছে।


সাদিফের ঠোঁটের কোঁণে হাসি ফুটে উঠে।হাসিমুখে অভির দিকে তাকায় সে।

অভি বলে,


-ব্যাথার মলম থাকলে নিয়ে আয়।লাগিয়ে দিলে ভালো হবে।


-আনছি।বলে দ্রুতপায়ে নিজের ঘরে যায় সাদিফ।


অভি নি:শব্দে হেসে দেয়।সাদিফের মতো রাগী মানুষও বোনের সামান্য ব্যাথায় কেমন অস্থির হয়ে উঠেছে।

মিহুর পাশ থেকে কিছুটা দূরে সরে বসে অভি।পকেট থেকে ফোনটা বের করে আড়চোখে মিহুর দিকে তাকায়।

কোমড় পর্যন্ত লম্বা চুলগুলো এলোমেলো হয়ে ছড়িয়ে আছে পিঠে।ওড়নাটা যে মেঝেতে পরে আছে,

মেয়েটা হয়তো খেয়াল করেনি।অস্থিরতায় ভরা দৃষ্টি সরিয়ে ফোনের দিকে তাকায় অভি।

মিহু কি করবে বুঝতে পারেনা।হঠাৎ মেঝেতে চোখ পরতেই আবারও চমকে উঠে।তার ওরনা মেঝেতে পরে আছে!!তারমানে অভির সামনে সে এতোক্ষণ ওড়না ছাড়া ছিলো?আল্লাহ্!অভি না জানি কি মনে করেছে।একটানে ওরনাটা উঠিয়ে টনের্ডোর গতিতে নিজের রুমে যেয়ে দরজা আটকে দেয় মিহু।

অভি হাসলো।মেয়েটা আসলেই বাচ্চা।


সাদিফ মলম নিয়ে আসে।মিহুকে না দেখে বলে,


-কই গেলো?


-ওই রুমে।অভি হাত দিয়ে ইশারা করে।তারপর বলে,পরে লাগিয়ে দিস মলম।সমস্যা হবেনা।

______________


-ভাইয়া, আমার ফোনের চার্জার কোথায়?তুমি নিয়েছো?বলতে বলতেই সাদিফের রুমে ঢুকে মিহু।

স্টাডি টেবিলে এতগুলা কাগজপত্র নিয়ে অভিকে বসে থাকতে দেখে অপ্রস্তুত হয়ে যায়।এরা যে এত পড়াশোনা করে কি মজা পায় এটাই ভেবে পায়না মিহু।

একবার ঘরে চোখ বুলিয়ে দেখে সাদিফ নেই।

অভি দ্রুত বলে,


-সাদিফ ওয়াশরুমে।


-ওহ্ আচ্ছা।বলে নিজেই যেয়ে ড্রয়ারে খুঁজতে থাকে।পেয়েও যায়।চার্জার নিয়ে বের হতে গেলে অভি বলে,


-কোথায় গিয়েছিলে?


মিহু বুঝতে পারেনা অভির কথা।


-জি মানে?


-মানে তখন যে এত জোরে দৌড় দিলে,মনে তো হচ্ছিলো তোমার রুমে কোন রেল স্টেশন আছে আর তোমার ট্রেন ছুটে যাচ্ছে।তাই বলছি,ট্রেনে করে কোথায় গিয়েছিলে?


মিহুর রাগ হয়।মুখ ভেংচিয়ে রাগী কন্ঠে বলে,

-আপনার শ্বশুরবাড়ি গিয়েছিলাম।আপনিও যাবেন?

বলেই হনহন করে রুম থেকে বেরিয়ে যায় সে।


অভি একা একাই হাসে।এক আঙ্গুল দিয়ে কপালের সাইডে ঘঁষতে ঘঁষতে বিরবির করে বলে,


-আমিতো আমার শ্বশুরবাড়িতেই আছি।....

Comments

You May Also Like