Home STORY অনুভূতি (পর্ব _১)
Home STORY অনুভূতি (পর্ব _১)

অনুভূতি (পর্ব _১)

 




#পর্ব-০১


সাঁতপাচ না ভেবেই হুট করে রিকশায় উঠে গেলাম আমি।

পাশের টং দোকানে চা খাচ্ছে আমার একমাত্র ক্রাশ ।ক্রাশের সামনে আসলেই আমার হার্টবিট উসাইন বোল্টের ন্যায় দৌড়াতে থাকে।কেমন অসার অসার লাগে।লুকিয়ে লুকিয়ে দেখার সময় মনে হয়,এই মনে হয় ধরা পড়ে গেলাম।উফফ!!কি জ্বালা!!শান্তিতে একটু দেখতেও পারিনা ক্রাশটাকে।


তো আমি আসলে এখন কলেজ থেকে বাড়ি ফিরছিলাম।বাসার কাছাকাছি আসতেই দেখি সয়ং ক্রাশ মহাশয় পাড়ার টং দোকানে চা খাচ্ছেন।এমনেই আমি দেখতে সুন্দর না।তার উপর কলেজ থেকে ফিরছি।

ক্লান্তিতে চেহারার বিধস্ত অবস্থা।আয়না নেই সাথে,নয়তো নিশ্চিত বলে দিতে পারতাম আমাকে ঠি ক ভূতের মতো লাগছে।এখন এই বিধস্ত অবস্থায় তো আর ক্রাশের সামনে থাকা যায়না।তাই নিজেকে আড়াল করতেই সামনে থাকা রিকশায় উঠে গিয়েছি।

পাশ থেকে কেউ ডাকছে বুঝতে পারছি কিন্তু আমি এখন ক্রাশকে দেখতে ব্যস্ত আশে পাশে কে ডাকছে সেসব নিয়ে মাথাব্যাথা নেই।রিকশা একটু এগিয়ে যেতেই ক্রাশকে আর দেখা গেলো না।


-এইযে,কে আপনি? আশ্চর্য তো!!হুট করে রিকশায় উঠে গেলেন।এত ডাকছি শুনতে পাচ্ছেন না,বধির নাকি?


কারো রাগী কন্ঠে ধমক শুনে এবার পাশ ফিরে তাকালাম।একজন সুদর্শন যুবক আমার পাশে বসে আছে।আরে!!এ কে!!


-আপনি আমার পাশে কি করছেন?বেশ জোরেই বলে উঠলাম।


উচ্চস্বরে কথা বলায় রাস্তার বেশ কিছু মানুষ সোজা আমাদের রিকশার দিকে তাকালো।এমনকি রিকশা আলাও একবার ঘাড় ঘুড়িয়ে পরখ করে নিলো।এবার আমি একটু মিইয়ে গেলাম।


-আরে আস্তে,আপনিতো আমাকে গণধোলাই খাওয়াবেন দেখছি।রিকশায় উঠলেন আপনি আর বলছেন আমি আপনার পাশে কি করছি?অদ্ভুত পাগল তো।


এবার ব্যাপারটা বুঝলো মিহু।তাড়াহুড়ো করে তখন এই লোকের রিকশায় উঠে বসেছে সে।তবুও দমে গেলে তো হবেনা।তার উপর লোকটা ওকে পাগল বলেছে।

কনফিডেনস নিয়ে বললো,


-এই,পাগল কাকে বলেন?রিকশায় উঠেছিতো কি হয়েছে হ্যাঁ?আমিতো ওতো মোটা না যে সব জায়গা নিয়ে বসেছি।আপনিতো আর জায়গায় অভাবে রিকশা থেকে পড়ে যাচ্ছেন না,তাইনা?তো এত সমস্যা কিসের?


-সমস্যা কিসের মানে?আপনি এরকম যার তার রিকশায় উঠে পরবেন নাকি?একটা ছেলের সাথে বাড়ি ফিরছেন আপনার বাসার লোক কিছু বলবে না?


একটু চিন্তায় পরে গেলো মিহু।লোকটা অবশ্য ঠি কই বলেছে। একহাত দিয়ে মাথা চুলকে বললো,


-আচ্ছা,যান ঠিকাছে।আমার বাসা সামনেই,আমি তার একটু আগেই নেমে যাব।আর ভাঁড়াটাও দিয়ে দিব।এবার খুশি?কিপটা কোথাকার।


মেয়েটার কথায় অবাক না হয়ে পারলোনা অভি।ও কিপটা?লাইক সিরিয়াসলি?তবুও কিছু বললোনা।এই মেয়ের সাথে যতো কথা বলবে ততোই কথা বাড়বে।চুপ থাকাই ভালো।সামনে নেমে গেলেই ঝামেলা শেষ।

কিছুক্ষণ চুপ থেকে কৌতুহল নিয়ে প্রশ্নটা করেই ফেললো অভি।


-আপনি এত কি দেখছিলেন ওই ছেলেটাকে?


হকচকিয়ে যায় মিহু।আমতা আমতা করে বলে,


-কোন ছেলে?আমিতো কাউকেই দেখছিলাম না।


অভি নি:শব্দে হেসে দেয়।সন্ধিহান গলায় বলে,


-ক্রাশ নাকি?


-ধ্যাত্ বেশি বুঝেন কেন?ওই ছেলে আমার ক্রাশ হবে কেন?উলটা আমিই ওর ক্রাশ।দেখলে ডিসটার্ব করবে তাইতো আপনার রিকশায় উঠে গেলাম বুঝলেন।হুহ্।


নিজের টেলেনট দেখে নিজেই মুগ্ধ মিহু।কি সুন্দর করে বানিয়ে কথা বলতে পারে।বাহ্।


-হুম,বুঝলাম তো।


মেয়েটার বাচ্চামো কথায় না হেসে পারেনা অভি।সে খুবই রাগী।অন্য কেউ হলে এতক্ষণে সে কি করতো তা সে নিজেও জানেনা।

একবার আড়চোখে সচেতনভাবে মেয়েটার দিকে তাকায়।

রিকশার একদম পাশ ঘেঁষে বসে আছে সে।একটু হলেই পরে যাবে।চোখের দৃষ্টি বাইরের দিকে।ঘন পাপড়ির আড়ালে গভীর কালো চোখদুটো যেন ঢেকে গেছে।


হাল্কা বাতাসে মাথায় থাকা ওড়না পড়ে যায় মিহুর।দৃষ্টি সরিয়ে নেয় অভি।একটা মেয়ের দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকা মোটেও কোন শোভনীয় কাজ নয় সেটা সে জানে।


মিহু দ্রুত ওড়না টেনে নেয়।আজকে সকালে তাড়াহুড়োয় হিজাবটাও পরতে পারেনি সে।


-আঙ্কেল থামান।আমি এখানেই নামব।রিকশা থামলে মিহু দ্রুত নামতে যেয়ে হোঁচট খায়।


অভি মৃদু ধমকের সরে বলে,


-আরে আসতে,এত ছটফট করেন কেন?


মিহু একপলক তার দিকে দৃষ্টি দেয়।চোখাচোখি হয়ে যায় তাদের।অভি চাইলেও দৃষ্টি সরাতে পারে না।

মিহু চোখ নামিয়ে নেয়।অসস্তি হয় তার।আমতা আমতা করেও কিছু না বলে ব্যাগ থেকে টাকা বের করতে নিলেই অভি বলে,


-হয়েছে।আপনার ভাড়াঁ দিতে হবেনা ভাড়াঁ দেয়াই আছে।আপনি বাসায় যান।


-কিন্তু.


অভি ইশারায় যেতে বলে।মিহু কথা বাড়ায় না।


বাসার গেট দিয়ে ঢুকতেই পিছে ফিরে দেখে ছেলেটা রিকশা থেকে ওর বাসার সামনেই নামছে।এমনকি গেট দিয়েও ঢুকে গিয়েছে।

দ্রুতপায়ে এগোতে এগোতে বলে,

-সমস্যা কি আপনার?এখন কি বাসায় এসে কমপ্লেন করবেন নাকি?


মিহুর কথায় ভ্রু কুচকে তাকায় অভি।শান্ত গলায় বলে,

-আমি এখানেই এসেছি।


বিরক্তি নিয়ে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে মিহু।ভাবে হয়তো কোনো ভাড়াটিয়ার বাসায় এসেছে।

একসাথেই সিঁড়ি দিয়ে উঠে তারা।তৃতীয় তলায় এসে অভি বেল বাজালেই বিস্মিত কন্ঠে মিহু বলে,


-আপনার ভুল হচ্ছে।এটা আমার বাসা।আপনি হয়তো অন্য কোনো..এটুকু বলতেই গেট খুলে দিলো সাদিফ।

সাদিফ মিহুর বড় ভাই।মিহুর থেকে প্রায় ছয় বছরের বড়।


-অভি,আয়।


অভি ভেতরে ঢুকতেই মিশুকে দেখে সাদিফ।অভির পিছে এতক্ষন দেখাই যাচ্ছিলো না মেয়েটাকে।


-তুই দাড়িয়ে আসিছ কেন?ভেতরে ঢুক।


ধীরপায়ে ভেতরে ঢুকে মিহু।মনে মনে তার হাজার চিন্তা।লোকটা কি তার ভাইকে কিছু বলে দিবে নাকি।ধুর..সব ছেড়ে এর রিকশায়ই উঠতে হলো।আর উনারই ভাইয়ার বন্ধু হতে হলো।

উফফ..পৃথিবাটা গোল।আসলেই পৃথিবীটা গোল।



Comments

You May Also Like